অত্যাধুনিক কম্পিউটারের যুগে ঘরে ঘরে কম্পিউটার এসে গেছে, অনলাইন কাজ থেকে ডাটা এন্ট্রি সবই হচ্ছে কম্পিউটার নামের এই যন্ত্রটির মাধ্যমে, আধুনিক কম্পিউটারের এই চেহারা কিন্তু একদিনে আসেনি, যুগ যুগ ধরে বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে এই যন্ত্র।
কম্পিউটার সৃষ্টির ইতিহাস অনেকেরই অজানা। কম্পিউটারের জন্ম কিন্তু কিছু বছর আগে নয়, কয়েক হাজার বছর আগে হয়। খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় তিন হাজার বছর আগে চীন গণনার জন্য ব্যবহৃত হত এ্যাবাকাস(Abacus)। এই Abacus থেকেই আধুনিক ক্যালকুলেটর তৈরীর ধারণা এসেছে বলে মনে করা হয়। কয়েকটি বিডস অর্থাৎ গোলচাকতির মাধ্যমে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে গণনার কাজ করা হতো। প্রাচীন যুগের Abacus থেকে কম্পিউটারের প্রথম চিন্তার সূত্রপাত।
Abacus আবিষ্কারের কয়েক হাজার বছর পর সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে ১৬৪৫ খ্রিষ্টাব্দে ফরাসি বিজ্ঞানী ব্লায়াস প্যাসকেল প্যাসকেলাইন যন্ত্র তৈরী করেন। যা প্রায় Abacus এর মতই কার্যকারী ছিল, ১৬৯৪ সালে প্যাসকেলাইন যন্ত্রের উন্নত সংষ্করণ স্টেপড রেকোনার তৈরী করেন গটফ্রেড উইলহেম ভন লেইবনিজ।
১৮২১ সালে চার্লস ব্যাবেজ একটি যন্ত্র আবিষ্কার করলেন যেখানে অংকের পাশাপাশি তথ্য নিয়েও কাজ হত, সেই যন্ত্রটির নাম ডিফারেন্স ইঞ্জিন নামে। এই যন্ত্রেরও উন্নত সংস্করণ এনালাইটিক্যাল ইঞ্জিন আবিষ্কার হল কিছুদিন পর, তবে এই যন্ত্র চালানোর জন্য ছিদ্রযুক্ত পাঞ্চকার্ড কেবলমাত্র একবারই ব্যবহার করা যেত৷ এই যন্ত্রে তিনটি অংশ ছিল একটি তথ্য প্রদানের অংশ, একটি ফলাফল প্রদানের অংশ এবং তথ্য সংরক্ষণের অংশ। আধুনিক কম্পিউটারে থাকা অংশ গুলির সঙ্গে চার্লস ব্যাবেজের এনালাইটিক্যাল ইঞ্জিনের অংশগুলির মিল আছে। এই কারনেই চার্লস ব্যাবেজকে কম্পিউটারের জনক বলা হয়ে থাকে।
চার্লস ব্যাবেজ
স্টিফেন হকিন্স
জর্জ বুশ
ডোর ফেল্ট
ইতিহাস ঘেটে যতটুকু জানা যায়, প্রায় চার হাজার বছর পূর্বে চীনাদের তৈরি অ্যাবাকাস নামক গণনাকারী যন্ত্রটিই প্রথম গণনাকারী যন্ত্র । যাকে কম্পিউটারের পূর্বপুরুষ বলা হয়। তখন থেকে আজ অবধি অনেক পর্যায় অতিক্রম করে বর্তমান আধুনিক কম্পিউটার । আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে জাপানে অ্যাবাকাসকে বলা হয় সারোবান রাশিয়ায় বলা হয় স্কোসিয়া। গ্রিক, রোমান এবং মিশরীয়রা অ্যাবাকাস ব্যবহার করলেও তাঁদের হিসাব পদ্ধতিতে শূন্যকে সূচনা করার কোন পদ্ধতি ছিল না। ভারতবর্ষে সর্বপ্রথম শূন্যকে একটি চিহ্ন প্রদান করে হিসাব পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।এ সময় দশভিত্তিক হিসাব পদ্ধতি শুরু হলেও অংকগুলোর কোন স্থানিক মান ছিল না। ৫০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ভারতবর্ষে দশভিত্তিক হিসাব প্রণালীতে অংক গুলোর স্থানিক মান দেওয়া হয়।
স্কটল্যান্ডের গণিতবিদ জন নেপিয়ার ১৬১৪ সালে লগারিদম (Logarithm) এর উদ্ভাবন করেন। এই আবিস্কার গুণ, ভাগ, বর্গ, বর্গমূল, ঘনমূল নিরূপনের কাজ অনেক সহজ করে দেয়। লগারিদমভিত্তিক হিসাবকার্যের জন্য নেপিয়ার যে সংখ্যাচিহ্নিত দন্ডগুলো ব্যবহার করেছিলেন সেগুলো নেপিয়ারের অস্থি বা দন্ড (Napier's bones or rods) নামে পরিচিত।
নেপিয়ারের লগারিদমের সারণী ব্যবহার করে উইলিয়াম অটরেড (William Oughtena। ১৬৩০ সালে প্রথম বৃত্তাকার সাইড রুল আবিস্কার করেন।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় গণিতবিদ অধ্যাপক চার্লস ব্যাবেজ ১৮২২ সালে ডিফারেন্স ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন। ১৮৩৩ সালে এনালিটিক্যাল ইঞ্জিন নামক একটি যান্ত্রিক কম্পিউটার তৈরীর পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং নকশা করেন। এজন্য তাকে কম্পিউটারের জনক বলা হয়।
১৮০১ সালে বস্ত্রশিল্পে নকশা নিয়ন্ত্রণের জন্য পাঞ্চকার্ডের ব্যবহার শুরু হয় । ফ্রান্সের জোসেফ মরী জেকাড (Joseph Marie lacquard )পাকার্ড ব্যবহার শুরু করেন।
1887 সালে ডঃ হরম্যান হলোরিথ যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি গননা কাজে যে মেশিন ব্যবহার করেছিলেন তাকেই টেবুলেটিং মেশিন বলা হয়।
বিশ্বের প্রথম ও একমাত্র কম্পিউটার যাদুঘর যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় অবস্থিত
ট্রানজিস্টরের পর আসে আইসি (IC) -এর ব্যবহার। সিলিকন বা সেমিকন্ডাক্টর-এর একটি ক্ষুদ্র অংশে একাধিক ট্রানজিস্টর সন্নিবেশিত করা হলে তাকে বলা হয় আইসি বা সমন্বিত সার্কিট। (Integrated Circute-IC)। আইসি ব্যবহার করে তৈরি হল নতুন প্রজন্মের কম্পিউটার। কম্পিউটারের সবচেয়ে বড় বিপ্লব ঘটে মাইক্রোপ্রসেসর আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে। ১৯৭১ সালে আমেরিকার ইন্টেল (Intel) নামক কোম্পানি সর্বপ্রথম মাইক্রোপ্রসেসর (Microprocessor) তৈরি করে। আধুনিক কম্পিউটারের দ্রুত অগ্রগতির মূলে রয়েছে। ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট। ১৯৫৮ সালে জ্যাক কেলবি (Jack Kilby) নামক একজন বিজ্ঞানী আই সি (I.C) তৈরি করেন। আইসি ব্যবহারের ফলে কম্পিউটারের আকার ছোট হয়, দাম কমে যায়, ব্যবহারের সুবিধা বেড়ে যায় এবং কাজের ক্ষমতা হাজার হাজার গুণ বেড়ে যায় । মাইক্রোপ্রসেসর দিয়ে তৈরি কম্পিউটারকেই আধুনিক মাইক্রোকম্পিউটার বা পার্সোনাল কম্পিউটার বলা হয়।
B3500, B2500 |
১৯৬৮ বারোস কোম্পানী আই.সি সার্কিট ভিত্তিক প্রথম কম্পিউটার |
IBM systern 360 |
আই.সি চিপ দিয়ে তৈরি প্রথম ডিজিটাল কম্পিউটার । |
১৯৪৮ সালে তার ট্রানজিস্টর (Trasistor) আবিষ্কৃত হবার পর কম্পিউটারে ভাল্বের বদ্লে ট্রানজিস্ট্ররের ব্যবহার শুরু হয়। ট্রানজিস্টর ব্যবহৃত কম্পিউটার ছোট হয়ে যেতে শুরু করে। কম্পিউটার গুলো আগের কম্পিউটার অপেক্ষা উন্নত ছিল। দুটি অর্ধপরিবাহী ডায়োড কি পাশাপাশি যুক্ত করে একটি অর্ধপরিবাহী ট্রায়োড তৈরি করা হয়। একে ট্রানজিস্টর বলা হয়। আমেরিকার বেল ল্যাবরেটরিতে ১৯৪৮ সালে জন বারডিন (Jhon Bardeen), উইলিয়াম শকলে (William Shocley) এবং ওয়াল্টার ব্রাটেইন (Walter Brattain) ট্রানজিস্টর উদ্ভাবন করেন। ট্রানজিস্টর আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে ইলেকট্রনিক্স বিপ্লব শুরু হয়। ট্রানজিস্টর তৈরিতে অর্ধপরিবাহী (Semiconductor) এর প্রয়োজন হয়। এতে অর্ধপরিবাহী হিসাবে সিলিকন বা জার্মেনিয়াম ব্যবহৃত হয়।
Read more